বিএনপি নেতা খোকনকে আসামি করে মামলা করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে–নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ

বিএনপি নিউজ ২৪ প্রতিবেদক,নরসিংদী: লোকমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ তিন দিনের শোক কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা তোলা হয়, নেতা-কর্মীরা ধারণ করেন কালোব্যাজ। বিকালে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলও হয়। এদিকে সংগঠনের সাবেক নেতা লোকমান হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে নরসিংদীতে বুধবার থেকে তিন দিনের হরতাল ডেকেছিলো ছাত্রলীগ। তবে বৃহস্পতিবার সকালে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। লোকমান মারা যাওয়ার দেড় দিন পরও এ নিয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন লোকমানের ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ।
নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) শামীম বলেন, “বিএনপি নেতা খোকনকে আসামি করে মামলা করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।” তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মুখোশধারী ব্যক্তিদের গুলিতে নিহত হন লোকমান। তিনি নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। লোকমানের ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা শামীম সাংবাদিকদের বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা সহজেই অনুমেয়।” শুক্রবার লোকমানের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “লোকমানের জনপ্রিয়তা অনেক জাতীয় নেতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো। এ জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।” জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম বলেন, “হত্যাকারীরা যে দলেরই হোক, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে।”

মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নরসিংদী ছাত্রলীগের নেতারা। সরকার সমর্থক এ ছাত্র সংগঠনটির নেতারা বলছেন, লোকমানের জনপ্রিয়তাকে হুমকি মনে করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এ নেতা হত্যাকাণ্ডের কারণ দলীয় কোন্দল বলে দাবি করে আসছে বিএনপিও। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকনকে এ হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি বলছে, মূল ঘটনা আড়াল করতেই খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, মন্ত্রী ও নরসিংদীর সংসদ সদস্য রাজুর সঙ্গে লোকমানের দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে লোকমানের কয়েকজন অনুসারীরা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে যান।

ওই ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগ গত ২২ অক্টোবর মন্ত্রী রাজুর বিরুদ্ধে নরসিংদীতে ঝাড়– মিছিল করে। জেলা ছাত্রলীগের ওপর লোকমানের নিয়ন্ত্রণ থাকায় মন্ত্রী এর দায়ভার মেয়রের ওপরই চাপান বলে সংগঠনটির নেতারা বলেন। স্থানীয় নেতারা জানান, গত বছর নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনের সময় রাজু-লোকমান মতদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে লোকমানের ছোট ভাই শামীম ভিপি হন। এর পাশাপাশি পৌর নির্বাচনেও লোকমান পুনরায় জয়ী হন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম কাইয়ুম বলেন, “এ সব ঘটনার জের ধরে মন্ত্রী ও তার ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুর মদদেই লোকমান হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।” শামীম বলেন, “মন্ত্রীর হুকুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় লোকমান বলেছিলেন- ‘এমন নেতা আমাদের দরকার নেই’। এ বক্তব্যের কারণেই তাকে আজ খুন হতে হয়েছে।”

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা বিভিন্ন জনকে জানিয়েছিলেন লোকমান। একই পদে মন্ত্রীর ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুর নামও আলোচনায় থাকায় এটাও দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বলে স্থানীয় নেতারা জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান সরাসরি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে বলেন, “আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। ৩৬ ঘণ্টা-৭২ ঘণ্টা বুঝি না, অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।” লোকমান হত্যাকাণ্ডে রাজুর সম্পৃক্ততা নিয়ে ছাত্রলীগ ও বিএনপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে অবস্থানরত মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হলেও তার সবগুলো মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
লোকমান হত্যাকাণ্ডের পর পর নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খোকন, বিএনপিকর্মী সজীব দাসসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়। লোকমান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ। আগামী ৯ নভেম্বর এর শুনানির তারিখ ঠিক করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

 

Free Web Hosting