মেডিক্যাল কলেজের চার ভারতীয় ছাত্রের নিখোঁজ রহস্যের জট খানিকটা খুলেছে

বিএনপি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম,সিলেট: সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের চার ভারতীয় ছাত্রের নিখোঁজ রহস্যের জট খানিকটা খুলেছে।সূত্র মতে, গত ৭ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লি হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বোমা হামলার ঘটনায় সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রকে আটকের পর এরই সূত্র ধরে আটক হয়েছে বাংলাদেশে অবস্থানরত এই চার ছাত্র। দিল্লি হামলায় জড়িত কাশ্মিরের খিশ্তওয়ারের বাসিন্দা, নগরীর রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরামকে ভারতীয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (এনআইএ) গত শুক্রবার ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।ভারতীয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটে অবস্থানরত ওয়াসিম আকরামকে ইতোপূর্বে দেশে ফিরিয়ে নেয় তার পরিবার। এনআইএ’র ধারণা, ওয়াসিমের ভাই জুনাইদ আকরাম দিল্লি বোমা হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন হিজবুল মুজাহিদীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ বিষয়েই ওয়াসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ গত শুক্রবার ওয়াসিম আকরাম নামের ওই কাশ্মিরি ছাত্রকে আটক করে আদালতে হাজির করে এবং তারপর বিচারক এই নির্দেশ দেন। গত মাসের এই বিস্ফোরণে ১৫ জন নিহত হয়। ছাত্রটি সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে পড়েন বলে তদন্ত সংস্থাটি বলছে।

বিবিসি রেডিও বাংলা সার্ভিসের কলকাতা প্রতিনিধি অমিতাভ ভট্টশালী জানিয়েছেন, দিল্লি বিস্ফোরণের সাথে জড়িত সন্দেহে যে কাশ্মিরি যুবককে আটক করেছিল ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ, সেই ওয়াসিম আকরামকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে এনআইএ। বিশেষ এনআইএ আদালত এই নির্দেশ দিয়েছেন। এনআইএ বলছে, ওয়াসিম আকরামের কাছ থেকে তার ভাই হিজবুল মুজাহিদীনের সঙ্গে যুক্ত জুনাইদ আকরামের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। ওয়াসিম আকরামকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। গত শুক্রবার আদালতের গোপন শুনানি চলার সময় ওয়াসিম আকরাম সরকারি খরচে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে চাননি। তবে, তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলে তিনি আদালতকে জানান। সূত্রগুলো জানিয়েছে, আকরামের বাবা সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই মর্মে চিঠি পাবার পরে তিনি বাংলাদেশ থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন এবং তদন্তকারী অফিসারদের হাতে তুলে দেন। ওয়াসিম আকরামের বাবা রিয়াজুল হাসান কাশ্মিরে ভারতীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাউড্রো ইলেকট্রিক কর্পোরেশনের কর্মকর্তা। আকরামের মা শামীমা বেগম খিসওয়াতের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তারা জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর সংঘটিত দিল্লি হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে বোমা হামলার ঘটনায় এনআইএ তার ছেলে ওয়াসিম আকরামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়- এমন চিঠি পাবার পর তারা সিলেটে অবস্থানরত ওয়াসিমের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কথা বলিয়ে দেন। এরপর তারা ওয়াসিমকে দেশে ফিরিয়ে নেন ও দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে ওয়াসিমকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন।
ওয়াসিমের বাবাব রিয়াজুল হাসান দাবি করেছেন, কারাগারে আটক হিজবুল মুজাহিদীনের এক সদস্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের তাদের পরিবারের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। হিজবুল মুজাহিদীন গত নভেম্বরের তাদের ছেলে জুনাইদ আকমলকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে দাবি করেন রিয়াজুল হাসান। জুনাইদকে অপহরণের পর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ওই হিজবুল মুজাহিদীন সদস্যকে গ্রেফতার করে জম্মু-কাশ্মির পুলিশ। জুনাইদ অপহরণের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জম্মু-কাশ্মির পুলিশ হিজবুল মুজাহিদীনের নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করে এবং তিনজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে আজহান আলী নামের একজনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে দিল্রি বোমা হামলায় ওয়াসিমের সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করে এনআইএ। জম্মু-কাশ্মির পুলিশ দাবি করছেন, জুনাইদ নিজেও হিজবুল মুজাহিদীনের সাথে সংশি ষ্ট। তবে, তার পরিবার বলছে, দিল্রি বিস্ফোরণের দিন (৭ সেপ্টেম্বর) নিজগ্রাম খিসত্ওয়ারেই ছিলেন ওয়াসিম। ওইদিন তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে কেনাকাটা করেন। মার্কেটের সিসিটিভি ক্যামেরাতেও এর প্রমাণ আছে। ঈদের ছুটি শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় বাংলাদেশে আসেন ওয়াসিম।
দিল্লি হাইকোর্টে বোমা হামলার পর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এর দায় স্বীকার করে ইমেইল পাঠালে আলোচনায় আসে খিসত্ওয়ার। ভারতীয় গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়, খিসত্ওয়ার থেকেই ওই ইমেইল পাঠানো হয়েছিল। এর সূত্র ধরে, আমির আব্বাস ও আবিদ হোসেন নামে আরো দুজনকে ইতোপূর্বে খিসত্ওয়ার থেকে গ্রেফতার করে ভারতীয় গোয়েন্দারা।
সূত্র জানায়, রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্র ওয়াসিম আকরামকে ভারতীয গোয়েন্দারা আটকের পর এই কলেজে অবস্থানরত অন্যান্য ভারতীয় ছাত্রদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই অংশ হিসেবে চার ভারতীয় ছাত্র আমির আমিন রেসি, তাসাদ্দুক রশীদ, মো. দানিশ ভাট ও তাওসেফ আহমদকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আটক করে উচ্চ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা দল। সেই সাথে আটক করা হয় ডা. আশরাফুজ্জামান চৌধুরী নামের একজনকেও, যার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। এরা সবাই রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নী চিকিৎসক। প্রথমোক্ত চারজনের বাড়ি জম্মু ও কাশ্মিরের বিভিন্ন স্থানে।
একটি নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় ছাত্রদের ব্যাপারে বর্তমানে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আটক মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া না গেলে তাদের সসম্মানে মুক্তি দেয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিনের অভিযানে এই পাঁচজন ছাড়াও রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. তানিয়া তাবাসসুম ও নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রশিদ আহমদকে আটক করে গোয়েন্দারা। ডা. তানিয়াকে আটকের এক ঘণ্টা এবং ডা. রশিদকে আটকের একদিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাকি পাঁচজন এখনো গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন।

 

Free Web Hosting