আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস আর খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী তাই তত্ত্বাবধায়ক::খালেদা জিয়া

রবিউল ইসলাম খান,লক্ষ্মীপর প্রতিনিধি : সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন হত্যা আর খুন আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান রাজনীতির ইতিহাস। আওয়ামী লীগ ৭২-৭৫সাল পর্যন্ত সিরাজ সিকদারসহ

৪০ হাজার নেতাকর্মীকে ও দেশের নিরীহ জনগণকে হত্যা করেছিল। এ সরকারে আমলে ১৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একটি খুনের ও সঠিক তদন্ত হয়নি। সাংবাদিক দম্পতি খুনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীকে খুঁজে বের করবে বলেছিল কিন্তু এখনো তার কোনো কিনারা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে সরকারের লোকজনই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি সাংবাদিক কলামিস্ট নির্মল সেনের সদ্য একটি লেখার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘এ সরকারের

আমলে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। ৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত এদেশের মানুষ ভালো ছিল না, এখনো ভালো নেই।’’

শনিবার বিকালে লক্ষ্মীপুর আর্দশ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়  মাঠে লক্ষাধিক লোকের বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া এ সব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘‘। এরা ক্ষমতায় আসলে প্রতিটি জেলায় জেলায় গডফাদার সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসী গডফাদাররা লক্ষীপুরের বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে হত্যা করেছিল।ওই হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসীদের রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করে দেন। এরা সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় টিতে থাকতে চায়। এ সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুরসহ দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং জনগণের অর্থ আর সম্পদ লুট করে তাদের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। দেশের মানুষ আজ খুব দুঃকষ্টে দিনাতিপাত করছে। লক্ষ্মীপুরে কোনো শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। সরকার কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করে আমদানি নিয়ে ব্যস্ত। বিনামূল্যে কৃষকদের সার, ঘরে ঘরে চাকরি,  ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার নামে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’’

বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘আগামী ১২ মার্চ ঢাকা চলো কর্মসূচির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে সরকারকে সর্বশেষ সর্তক সংকেত দেয়া হবে।’’

খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সময় থাকতে সুপথে আসুন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করুন। অন্যথায় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে জনভিত্তিক কর্মসূচি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠা নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটানো হবে।’’

ওই কর্মসূচিতে জনসাধারণকে অংশ নেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমিও আপনাদের সঙ্গে অবস্থান নেবো। মহাসমাবেশে বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’’

গত ২৯ জানুয়ারি গণমিছিলে লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর ও রাশাহীতে ৫ নেতাকর্মী হত্যার বিচার দাবি করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘যদি এই সরকার ওই খুনের বিচার না করে বিএনপি ক্ষমতায় এলে অবশ্যই খুনিদের বিচার করা হবে।’’

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে সেদিন পুলিশ গুলি করে আমদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি সাজাননো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গুলি করে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন দামিয়ে রাখা যাবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনবর্হালের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত বিএনপি র্কমী আবুল কাশেম, যুবদল র্কমী রুবেল হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে ও  তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে জেলা বিএনপি এ মহাসমাবেশের  আয়োজন করে।

সরকারকে খুনি আখ্যা দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘গত ৩বছরে ১২হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ এখন আর ঘরেও নিরাপদ নয়। দুবেলা খাবার দিতে পারে না। কর্মসংস্থান নেই। বিদেশ থেকে মানুষ ফেরত আসছে। প্রতিটি জিনিসের দাম উর্ধমুখী।’’

খালেদা জিয়া বলেন, দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ  আজ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। সীমান্তে এ দেশের নিরীহ মানুষকে পাখির মতো গুলি হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানী কী আমার দেশের মেয়ে নয়? চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন কৃষককে বিএসএফ ধরে নিয়ে উলঙ্গ করেছে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কোথায়। কারণ সীমান্তরক্ষীরা এর প্রতিবাদ করতে প্রস্তুত থাকলেও অথচ সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পাচ্ছে না।’’

তিনি সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এ মুহূর্তে থেকে সীমান্ত হত্যাসহ সব খুন খারাবি বন্ধ করতে হবে।’’

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সরকার ৩ বছরে নতুন কোনো কলকারখানা গড়তে পারেনি। এজন্য বেকারত্ব বাড়ছে। ব্যাংকের সব টাকা সরকার নিয়ে ব্যাংকগুলোকেও দেউলিয়া করছে।’’

শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ ছোটখাটো পুঁজি নিয়ে শেয়ার ব্যবসা করতো। তাও সরকার শেষ করে দিয়েছে। ৩৩ লাখ লোক পথে বসেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা শেযার মার্কেট থেকে লুট করে নিয়েছে। প্রতিবাদ করলে গ্রেফতার করা হয়, জেলে নেয়া হয়। দুঃখ সইতে না পেরে ঢাকা ও চট্রগ্রামে দুজন আত্মহত্যা করেছে। সুতরাং যে সরকার গরিব মানুষের টাকা লুটে নেয়, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’’

ইতিপূবে পালিত রোডমার্চ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ওই রোডর্মাচ দেখে সরকার ভীত হয়ে গেছে, মাথা খারাপ হয়ে গেছে। রোডমার্চ থেকে ২৯ জানুয়ারি গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়ে ছিলাম। সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও সরকার গুলি করে নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আগামী ১২ মার্চ চল চল ঢাকা চল কর্মসূচি। সেদিন সারাদেশ থেকে মানুষের ঢল নামবে। এজন্য সরকারের মন্ত্রীদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা আবোল তাবোল বলছেন। ওইদিন তারা ঢাকা দখলের হুমকি দিয়েছেন। আমি তাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা দখলবাজ নই। ঢাকা দখল করবো না। ঢাকায় অবস্থান করবো।’’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ পদ্ধতির সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়। তারা তত্তবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান সরকার আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ, এবার ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন নেই। সেজন্য তারা আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করতে চায়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা ব্যালট পেপার পরিবর্তন করে নিজের দলের লোককে জয়ী করে তাদের অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারে না। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। গণতন্ত্রকে ধারাবাহিক রাখতে হলে নির্ধলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এদের হাতে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়।’’

এ দিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় বক্তব্য দেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া এমপির সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বৃক্ততা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আবদুল মইন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ররকত উল্লাহ বুলু, আলহাজ্জ মোঃ শাহজাহান, ব্যারিস্টার এএম মাহাবুব উদ্দিন খোকন এমপি, বিরোধী দলীয় চীফ হুইফ জয়নাল আবদীন ফারুক এমপি, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, আশরাফ উদ্দিন মিজান এমপি, নাজিম উদ্দিন এমপি, কেন্দ্রীয় যুবদল কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক সাহাবা উদ্দিন সাবু।

এদিকে খালেদা জিয়ার আগমনে সকাল ১১টা থেকে লক্ষীপুর আদর্শ সামাদ মাঠে লোকজন আসতে থাকে দুপুর ২টা বাজে পুরো মাঠ ও আশ পাশের এলাকা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছেন।

 

Free Web Hosting